মহাকাশের মানুষের কাজকর্ম, গবেষণার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। আর এই মহাবিশ্বকে দেখা এবং অনুভব করতে পৃথিবীর যে চোখকে কাজে লাগানো হচ্ছে তা হল হাবল টেলিস্কোপ। কখনো কি ভেবে দেখেছেন এই ফুটবল মাঠের সমান আইএসএস এবং পুরো একটি আস্ত স্কুল বাসের সমান হাবল টেলিস্কোপ কে কিভাবে এই মহাকাশে পৃথিবী থেকে তোলা হয়েছে।আমরা কয়েক বছর আগে দেখলাম বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কে মহাকাশে নিয়ে গেল স্পেসএক্স ফ্যালকন নাইন রকেট। আবার নিরাপদে ফিরে আসলো এই রকেট । কিন্তু এটিই কি প্রথম পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট?
এই গল্পের যাত্রা শুরু চাঁদ থেকে মানুষ আসার পরেই ১৯৬৯ সালে।মূলত এরপর মানুষ ভাবতে থাকে মহাকাশে থেকে মহাকাশের নানা গবেষণা চালানোর। তবে এই কাজের জন্য প্রয়োজন মহাকাশ এবং পৃথিবীর মধ্যে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা। তখনকার থাকা রকেটগুলো এই কাজের জন্য প্রস্তুত ছিল না কারণ তৎকালীন রকেটগুলো মাত্র একবার ব্যবহার যোগ্য ছিল। তাই NASA (National Aeronautics and Space Administration) তাদের চতুর্থ স্পেস spaceflight প্রোগ্রাম চালু করে যার নাম স্পেস ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম (STS) এই প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল পুনর্ব্যবহারযোগ্য মহাকাশযানের একটি সিস্টেম চালু করা। সেজন্য তৈরি করা হয় মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে জটিল মহাকাশযান The space shuttle .
অনেক মানুষের পরিশ্রম এবং সাধনার পর এই মহাকাশযান ১৯৮১ সালের ১২ই এপ্রিল তার কার্যক্রম শুরু করে।
Why this was used?
Space Shuttle এমন একটি চিন্তা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি খুব ঘনঘন ব্যবহার করা যায়। যাতে করে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সহ সেগুলো মহাকাশেই মেরামত করা এবং আবার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে ফিরিয়ে আনা যায়। মিলিটারি এই প্রোগ্রামের বড় অংশীদার ছিল। তাই মিলিটারি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ একটা প্রধান কাজ ছিল এটির। তবে ১৯৮৬ সালে স্পেস সাঁটল এর একটি দুর্ঘটনার পর বোঝা যায় এটি খুব ঘনঘন ব্যবহার করার উপযোগী নয় ইউএস মিলিটারি কম খরচে ঘনঘন একবার ব্যবহার উপযোগী রকেট ব্যবহার করতে থাকে।
এছাড়াও এই স্পেস শাটল সুযোগ করে দিয়েছিল মহাকাশে নানা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালঊশ। আগে শুধুমাত্র মিলিটারি লোকদের মহাকাশচারী হিসেবে পাঠানো হতো তবে এই প্রোগ্রামের আরেকটা বড় উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ নাগরিকদের মহাকাশে পাঠানোর। যাতে বৈজ্ঞানিক দের দ্বারা সরাসরি সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো যায়। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ 30 বছর সময়কালের এই প্রগ্রামে মহাকাশে মানুষের দেহের পরিবর্তনসহ মহাকাশে প্রাণীর ওপর নানা গবেষণা করা হয়। তবে স্পেস শাটল দিয়ে করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল মহাকাশ স্টেশন মহাকাশের স্থাপন। এই মহাকাশ স্টেশন সম্পূর্ণ তৈরি হতে প্রায় 13 বছর সময় লেগেছে এবং এর মধ্যে বেশ কয়েকটা মিশনে স্পেস শাটল ব্যবহৃত হয়েছে। মহাকাশ স্টেশনে স্পেস শাটল এর মিশনের সংখ্যা প্রায় 37 টি। যা স্পেস শাটল মিশনের এক-তৃতীয়াংশ।নানা কার্গো পৌঁছানোসহ এটি the European Columbus laboratory, the Harmony node, the Tranquility node, the Japanese Kibo laboratory, solar panels, airlocks ট্রান্সপোর্ট করেছিল।এছাড়াও ভেতরের কিছু যন্ত্রপাতি যেমন ব্যায়ামের সামগ্রী, টয়লেট যন্ত্রপাতিসহ খাদ্য সরবরাহ করেছিল। তবে স্পেস শাটল সবচেয়ে বেশি পরিচিত হাবল টেলিস্কোপ পৌঁছানোর জন্য স্টেশনে এই মহাকাশযসজা দ্বারা এটি মহাকাশে পৌঁছানো হয় 25 এপ্রিল ১৯৯০ সালে। এছাড়াও ১৯৯৩ সালে এই টেলিস্কোপ মেরামত করা হয়।
It's Structure
আমার কাছে এটি যেমন রকেট তেমনি এটি অনেকটা air plain এর মত। নাসাও এটাকে এই পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি করেছে যাতে এটি রকেটের মতো লম্বালম্বি যায় এবং নামার সময় প্লেন এর মতো করে আসে। এই মহাকাশযানের প্রধান তিনটি অংশ রয়েছে:
1.The Orbiter Vehicle ( OV )
2.The External Tank ( ET )
3.SRB ( Solid Rocket Booster )
অরবিটাল ভেহিকেল অনেকটা প্লেন এর মতো। এটি দৈর্ঘ্য বরাবর 37 মিটার এবং প্রস্থ বরাবর প্রায় 24 মিটার। এর মধ্যে অংশকে বলে Fuselage. এর তিনটি মেইন ইঞ্জিন থাকে যেগুলো কে বলে স্পেস শাটল মেইন ইঞ্জিন ( SSME ) যেটি এক্সটার্নাল ট্যাংক থেকে জ্বালানি পায় এছাড়াও এখানে রয়েছে 2 টি ও এম এস মোটর। এটি LEO ( low earth orbit ) এ ক্রু সহ প্রায় 60 হাজার পাউন্ড মালামাল বহন করতে সক্ষম ছিল। এছাড়াও এর পরে একটি রোবোটিক আর্ম যুক্ত করা হয় যাকে বলা হয় Canadarm.
Canadarm |
How did it work?
সকল স্পেস শাটল মিশন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপিত হয়েছিল।স্পেস শাটল উৎক্ষেপণের পর দুই মিনিট পর্যন্ত এসবি আর বল বা ধাক্কা প্রদান করে থাকে। এ সময় অরবিটাল এর ইঞ্জিন কাজ করে না। দুই মিনিট পর এস বি আর orbiter থেকে ছুটে পড়ার পর স্পেস সাটল ইঞ্জিনগুলো সক্রিয় হয় । এস বি আর নিচে সমুদ্রের পড়ে যায় এবং সেগুলো কে আবার এনে ব্যবহার উপযোগী করা হয় পরের মিশনগুলোর জন্য। অন্যদিকে অরবিটালের ইঞ্জিনগুলো এক্সটার্নাল ট্যাংক থেকে লিকুইড হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন ব্যবহার করে তাদের গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পায়। যখন জ্বালানি ফুরিয়ে যায় তখন এক্সটার্নাল ট্যাংক অরবিটাল থেকে ছুটে যায় এবং সেটি পৃথিবীতে পড়ে যায় তবে এক্সটার্নাল ট্যাংক বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে আসে বলে অতিরিক্ত তাপে এটি পুড়ে যায় অথবা এর কিছু অংশ থাকে যা ব্যবহার উপযোগী নই অর্থাৎ এটি একমাত্র অংশ যা বারবার প্রত্যেক মিশনের জন্য তৈরি করতে হয়। মহাকাশে অরবিটাল যাওয়ার পর এটি ও এম এস দ্বারা চালিত হয় এক থেকে দুই সপ্তাহ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। এরপর প্রয়োজনীয় কাজ শেষে এটি তার বেগের পরিবর্তন ঘটিয়ে পৃথিবীর দিকে আসতে থাকে তবে এ ক্ষেত্রে space shuttle কে অনেক তাপ সহ্য করে আসতে হয় যার কারণে এর বাইরের অংশ পুরোটাই সিলিকা টাইলস বা সিলিকা glass ফাইবার দিয়ে তৈরি যা অনেক ধীরে তাপ গ্রহণ করে। এরপর এটি নিচে আসার পর প্লেন এর মতো করে নামতে থাকে এবং প্লেন এর মতো করে নির্দিষ্ট রানওয়েতে অবতরণ করে।
অরবিটাল ভেহিকল হলো এই পুরো রকেটের প্রধান অংশ । এই স্পেস শাটল প্রোগ্রামে মোট ৬ টা অরবিটাল ভেহিকল তৈরি করা হয়েছিল। সেগুলো হলো
1.Enterprize
2.Columbia
3.Challenger
4.Discovery
5.Atlantis
6.Endeavour
এছাড়াও তৎকালীন ইউ এস এস আর যুক্তরাষ্ট্রের স স্পেস শাটল এর মত করে একটি রকেট তৈরি করে যার নাম Buran. তবে এই রকেটটি কখনো উৎক্ষেপণ করা হয়নি।
All the Orbiter Vehicles |
Disasters
Space shuttle মোট 135 টি মিশন সম্পন্ন করে এরমধ্যে 133 টি মিশন সফল হয়। তবে ২ টি মিশন ফেল হয় তবে এই দুটি মিশন খুব খারাপ ভাবে মোট ১৪ জন নভোচারীর প্রাণ কেড়ে নেয়। স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জের 1986 সালে লঞ্চ করার সময় বিস্ফোরিত হয়. অন্যদিকে 2003 সালে স্পেস শাটল কলম্বিয়া মহাকাশ থেকে আসার পথে re-entry এর পর্যায়ে বিদ্ধস্ত হই। এই মিশনে ছিলেন মহাকাশে যাওয়া প্রথম নারী নভোচারী কল্পনা চাওলা। পুরো বিশ্বকে কাদিয়ে তুলেছিল এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা গুলো ।
No comments:
Post a Comment